কম্পিউটারের প্রজন্ম ও কম্পিউটারের ইতিহাস কি।
কম্পিউটারের ইতিহাস
কম্পিউটারের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয় ১৯৮০ সালে। চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়। চার্লস প্রথমে ৮ দশমিক ঘর পযন্ত সয়খ্যা গনণা ও পরে ২০ দশমিক ঘর পযন্ত সংখ্যা গনণা করতে পারে এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেন। চার্লস ব্যাবেজের এই যন্ত্র শুধু কিছু গাণিতীক হিসাব নিকাশ করতে পারত।
বর্তমানে আমরা যেসব কম্পিউটার ব্যবহার করছি তা অনেক প্রজন্ম পড়ে এসেছে। বর্তমান ডিজিটাল আধুনিক কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয় ১৯৪৩ সাল থেকে। নিম্নে কম্পিউটারের প্রজন্ম সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার
কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার আকারে অনেক বিশাল বড় ছিল। একটি কম্পিউটারের জন্য কয়েকটি ঘরের প্রয়োজন হত। প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হত তার মধ্যে ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব, যার আকার ছিল অনেক বড় বড়। হাজার হাজার ডায়োড, রেজিস্টার, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হতো প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার।
ঐসব কম্পিউটার চালু রাখার জন্য অনেক বেশি বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হতো এবং চালু অবস্থায় কম্পিউটার অনেক গরম হয়ে যেত। তাই পুড়ে যাবার থেকে বাঁচানোর জন্য মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হতো।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার আকারে অনেক বড় থাকলে কি হবে এগুলোর মেমোরির তথ্য ধারণ ক্ষমতা ছিল খুবেই সীমিত। ঐসকল কম্পিউটার পরিচালনা ছিল খুবেই ব্যয়বহুল। ১৯৪৫ সালে শেষে বোস্টনে প্রথম আবিষ্কৃত হয় LBM-650 কম্পিউটার-(বিকাসপিডিয়া)। এটি ছিল প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত কম্পিউটার।
প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- আকারে অনেক বড় ছিল।
- ধীর গতিসম্পন্ন, শুধু গণনার কাজে ব্যবহার হতো।
- মেমোরি হিসেবে ম্যাগনেটিক ড্রাম ব্যবহার হতো।
- মেমোরির ধারণ ক্ষমতা ছিল খুবেই কম।
- বেশি বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হতো।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টার এর ব্যবহার শুরু হয়। যার ফলে কম্পিউটারের আকৃতি ও কাজের গতির বিশাল পরিবর্তন সাধিত হয়। এই ট্রানজিস্টার সর্বপ্রথম ১৯৪৮ সালে আমেরিকাতে উইলিয়াম বি, শকলি- জন বার্ডিন এবং এইচ ব্রিটেন এই তিন জনে মিলে এই ট্রানসিস্টার তৈরি করেন।
এ ট্রানজিস্টার কম্পিউটারের উন্নতিতে বিপ্লব এনে দেয়। ট্রানজিস্টার আবিষ্কার হওয়ার পর কম্পিউটার প্রযুক্তিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এ প্রজন্মে কম্পিউটার খুব কম গরম হত ও প্রথম প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে এটি আকারে অনেক ছোট ছিল।
এই প্রজন্মের কম্পিউটারে যেহেতু ট্রানজিস্টার ব্যবহার করা হয় তাই বিদ্যুৎ খরচও খুব কম হত। দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে প্রথম হাই লেভেল প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর ব্যবহার শুরু হয়। এ প্রজন্মের একটি কম্পিউটার দিয়েই প্রথম 1964 সালে বাংলাদেশে কম্পিউটারের সূচনা হয়।
দ্বিতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যঃ
- আকারে অনেক ছোট এবং কম বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়োজন হয়।
- টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টারের ব্যবহার হয়।
- ডাটা প্রসেসিং ক্ষমতা বৃদ্ধি।
- টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার।
- উচ্চ গতি সম্পন্ন ইনপুট আউটপুট ব্যবস্থার প্রচলন।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বড় বড় সার্কিট কে IC -(Integrated Circuit) ছোট সার্কিটে রূপান্তর করা হয়। IC আবিষ্কারের ফলে এ প্রজন্মের কম্পিউটারের আকৃতি অনেক ছোট হয় এবং কাজের গতি অনেক বৃদ্ধি পায়।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটার আবিষ্কারের ফলেই পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারের সাথেই প্রথম আলাদা ভাবে মনিটরের ব্যবহার শুরু হয়। তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের মেমোরি বা স্মৃতি ব্যবস্থারও অনেক উন্নতি ঘটে। এ প্রজন্মের কম্পিউটারে অপারেটিং সিস্টেম বা উইন্ডোসের ব্যবহার শুরু হয়। সর্বপ্রথম প্রিন্টারের ব্যবহার প্রথম এ প্রজন্মের কম্পিউটারে শুরু হয়।
তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- IC-ব্যবহারের ফলে আকৃতি অনেক ছোট হয়েছে।
- অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোসের ব্যবহার।
- আলাদা ভাবে মনিটরের ব্যবহার।
- মেমোরির ধারণ ক্ষমতা অনেক বেশি।
- মুদ্রন করার জন্য প্রিন্টারের ব্যবহার।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
কম্পিউটারের ইতিহাসে চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার মাইক্রোপ্রসেসর এবং সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি দিয়ে তৈরি হয়। এই মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কারের ফলে কম্পিউটারের আকৃতি অনেক ছোট হয়, এবং গতি হাজার গুনে বৃদ্ধি পায়। ১৯৭১ সাল থেকেই ৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের যাত্রা শুরু হয়। আমেরিকার- জন ব্ল্যাংকেন বেকার কেনব্যাক প্রথম মাইক্রো কম্পিউটার তৈরি করেন।
১৯৮১ সালে আইবিএম কোম্পানি প্রথম মাইক্রো কম্পিউটারের ব্যবসা শুরু করেন। এর ফলে পার্সোনাল মাইক্রো কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারে RAM – (Random Access Memory) এর ব্যবহার শুরু হয়, ফলে এ প্রজন্মের কম্পিউটারের গতি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- মাইক্রো প্রসেসরের ব্যবহার।
- আকার অনেক ছোট কিন্তু কাজের গতি অনেক বেশি।
- তথ্য ধারণ ক্ষমতা বা মেমোরির উন্নতি।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার।
- ট্রানজিস্টার গুলোতে ফাইবার অপটিক্যাল ব্যবহার।
- অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চ গতি সম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার
মাইক্রো প্রসেসরের উন্নতির ফলে চতুর্থ্য প্রজন্মের কম্পিউটার থেকে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার অধিক শক্তিশালী। এই কম্পিউটারে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রসেসর ও প্রচুর পরিমান ডাটা ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন করার গবেষণা চলছে। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহারের অনেক উন্নতি ঘটেছে। পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা নিয়ে প্রছুর গবেষণা চলছে।
পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য
- শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসরের ব্যবহার।
- তথ্য ধারণ ক্ষমতার মেমোরির ব্যবপ উন্নতি।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বার উন্নতি সাধন।
আমরা বর্তমানে যে সমস্থ কম্পিউটার ব্যবহার করি তা এক সময় ছিল শুধু কল্পনা। 1969 সালে নাসা চাঁদ অভিযানের সময় যে কম্পিউটার ব্যবহার করেছিল তার থেকে বর্তমানে আমরা যে স্মার্টফোন ব্যবহার করি তা হাজার গুণ বেশি শক্তিশালী।
সেই সময়ের এরকম একটি দুর্বল কম্পিউটার দিয়ে এত বড় একটি অভিযান সম্পন্ন করেছিল, তাহলে বর্তমানের কম্পিউার দিয়ে আমরা কি না করতে পরি।
আরও পড়ুন: